মেজবান একটি ফারসী শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে অতিথি । মেজবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে মেহমানদারি । এই মেজবানের মাংস চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্য যা বহুকাল আগে থেকে প্রচলিত । এই মেজবান আয়োজনের মূল অনুষ্ঠানটি হল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ চন্দ্রমাসের ১২তম রবিউল আউয়াল পালন করা।এছাড়া ও কোন মানুষের মৃত্যু বাষিকী।
শিশুর জন্ম , বিবাহ, খৎনা , নতুন বাসভবনে প্রবেশ , ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই মেজবানি মাংসের আয়োজন করা হয়। মেজবানের প্রধান বৈশিষ্ট হল এর খাদ্য-তালিকা সাদা-ভাত এবং গরুর মাংসের তরকারি। সারা বাংলাদেশে এই চট্টগ্রামের মেজবানি মাংসের খ্যাতি রয়েছে । বর্তমানে বিভিন্ন হোটেল গুলোতে সপ্তাহের একটি দিনে মেজবানির খাবারের আয়জন করা হয়। এই চট্টগ্রামের মেজবানের মাংসের স্বাদ এতটাই যে সেইদিনটিতে হোটেলগুলোতে ভিড় জমে যায়। চট্টগ্রামে সমাজের কোন বাড়িতে যদি মেজবান হয় সমাজের সব লোক এখানে অংশ নিতে পারে কোন রকম দাওয়াত ছাড়াই । তাই এই মেজবানের আয়োজন সাধারনত অবস্থাসম্পন্ন লোকেরাই করে থাকে।
মেজবানের মাংস রান্নার রেসিপি
এই মেজবানের মাংস সাধারনত পেশাদার শেফ রান্না করে । তবে আমি একজন শেফ এর কাছ থেকে এই রান্নাটা শিখেছি । এই মেজবানি মাংসের স্বাদ এবং ঘ্রান এতটাই ভাল যে একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করবে ।অথেন্টিক উপায়ে রান্না করে দেখিয়েছি আশা করছি আপনাদের ভাল লাগবে।
উপকরনঃ
১। গরুর মাংস দের কেজি
২। পেঁয়াজ কুচি দের কাপ
৩। রসুন বাটা দের টেবিল চামচ
৪। আদা বাটা ২ টেবিল চামচ
৫। লাল মরিচ গুড়া ২ টেবিল চামচ বা পরিমানমত
৬। হলুদ্গুড়া দের টেবিল চামচ
৭। ধনিয়ার গুড়া দের টেবিল চামচ
৮। জিরা বাটা দের টেবিল চামচ
৯। মিষ্টি জিরা বা মৌরি বাটা ১ টেবিল চামচ
১০। সাদা গোলমরিচ বাটা ১/২ টেবিল চামচ
১১। কালো গোলমরিচ বাটা ১\২ টেবিল চামচ
১২। কাঠবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ
১৩। সরিষা বাটা দের টেবিল চামচ
১৪। পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল চামচ
১৫। এলাচ ৬ টি
১৬। লং ৮ টি
১৭। দারুচিনি ৩ টুকরা
১৮। তেজপাতা ৩টি
১৯। সরিষার তেল ১ কাপ
২০। লবন পরিমানমত
প্রস্তুতপ্রনালি
মেজবানের মাংস রান্না করার জন্য প্রথমে গরুর মাংসের সাথে একে একে সব উপকরন দিয়ে ভাল ভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। এই মেজবানের মাংস অবশ্যই সরিষার তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। অথেন্টিক চট্টগ্রামের মেজবানি মাংসের স্বাদ এবং স্মেল পেতে হলে অবশ্যই সরিষা তেল দিয়ে রান্না করতে হবে । এখন মাখিয়ে নেওয়া মাংস টাকে একটা হাড়িতে নিয়ে high heat এ পাঁচমিনিট রান্না করতে হবে। তারপর ভাল্ভাবে নেড়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে মিডিয়াম হিটে আর ৩০মিনিট রান্না করতে হবে । মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে যাতে নিচে লেগে না যায়। ৩০ মিনিট পর মাংসের সাথে পরিমানমত পানি( মাংস সিদ্ধ হতে যতটুকু পানির প্রয়োজন) দিয়ে আর থেকে ৪০ মিনিট রান্না করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু মেজবানি গরুর মাংস ।
উপসংহার
মেজবানি মাংসটাকে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয় বলে মাংসটা একদম নরম হয়ে যায় এতে এর স্বাদ আর অনেকগুন বেড়ে যায়। মেজবানি মাংস ছাড়াও চট্টগ্রামের আর কয়েকটি ঐতিয্যবাহী খাবার হচ্ছে গরুর মাংসের কালাভুনা , গরুর পায়া দিয়ে ডালরান্না । এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ শুটকীর নানা রকম রেসিপি তৈরি করা হয়। শাহী রেসিপির আরও রেসিপি গুলো হচ্ছে আচারি গরুর মাংস ভুনা/আচারি গোশত /আচারি বিফ ভুনা রেসিপি, সৌদিআরবের বিখ্যাত বিরিয়ানি রেসিপি খাবসা, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গরুর মাংসের কালাভুনা রেসিপি, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের মাংস রেসিপি।